Press "Enter" to skip to content

সরকারীর চেয়ে বেসরকারীতেই আমাদের দেশপ্রেম বেশি

কথায় আছে “সরকারী মাল দড়িয়ামে ঢাল”। সন্তানের লেখাপড়ার প্রয়োজনে প্রায় দশ বছর হলো ময়মনসিংহ শহরে বসবাস। কর্মস্থল পূর্বধলা হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন সহজ যাতায়ত মাধ্যম সরকারী বাহন জারিয়ার ট্রেনে সকাল বিকাল আসা যাওয়া করছি। ট্রেনে যাতায়ত করাটা যেমন নিরাপদ তেমনি সাশ্রয়ী। প্রথমে ভাড়া ছিলো ১০/- টাকা, পরে তা বেড়ে ১৭/- টাকা হয়েছে। সড়ক পথে সিএনজি ভাড়া ১০০/- আর রিকসা ভাড়া ৪০/- টাকা। সড়ক পথে একদিন যাতায়ত করতে খরচ হয় ২৮০/- টাকা। সড়ক পথে একদিনের আসা যাওয়ার খরচ দিয়ে এক সপ্তাহ ট্রেনে যাতায়ত করা যায়। তাই আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তারা একটু কষ্ট করে হলেও ট্রেনে যাতায়তে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। টিকিট কাটার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কারণ ময়মনসিংহ স্টেশনে টিকিট কাউন্টার সঠিক সময়ে খোলা হয়না। এতে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো গুরুত্ব নেই। আবার তাড়াহুড়া মধ্যে বিশ টাকার নোট দিলে তিন টাকা ফেরত দেয়া হয় না। চাইলে ভাংতি না থাকার অজুহাত। আমি অবশ্য তিন টাকা এমনি দিতে রাজি নই। ভাংতি সতেরো টাকা আগেই পকেটে নিশ্চিত করতাম। কোনো সময় ভাংতি না থাকলে জারিয়া পর্যন্ত টিকিট কাটি। যাতে বাড়তি তিন টাকা রেল পায় (ছাত্রজীবনে বহুবার বিনাটিকিটে রেল ভ্রমনের দায় রয়েছে। তাই দায় মুক্তির কিছুটা প্রয়াস)। প্রথম প্রথম দুই একজন টিটিইর দেখা পেতাম। কিন্তুএখন আর চোখে পড়ে না। বিষয়টি নিয়ে পরিচিত একজন রেল কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তির সুরে বলেন “জাইরার গাড়ির যাত্রীরা কি টিকিট করে?” তিনি আরো জানান প্রতিদিন ট্রেনটা চার বার আসা যাওয়া করে কিন্ত ময়মনসিংহ স্টেশনে সারাদিনে ১’শ টিকিটও বিক্রি হয় না! অথচ হাজার হাজার যাত্রী যাতায়ত করছেন। বিষয়টি যাচাই করতে অনেক সময় কাউন্টারের পাশে দাড়িয়ে থেকে দেখেছি প্রথম শ্রেণির অনেক পরিচিতজন টিকিট কাউন্টারের দিকে না তাকিয়ে সুর সুর করে প্লাটফর্মে ঢুকে যেতে। বিনে টিকিটে রেল ভ্রমনে তাদের সামান্যতম লজ্জাবোধ নেই। কেউ কেউ আবার নিয়মিত টিকিট কাটা যাত্রীদের ট্রেনে বসে নিরুৎসাহিত করতেও দেখা যায়। অথচ বেসরকারীর খাতে পরিচালিত বলাকা কমিউটার ট্রেনে প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি টাকায় টিকট না কেটে পার পাওয়া যায় না। যত সুযোগ সরকারীতে,! বেসরকারী খাতে এদিক সেদিক করার সুযোগ একেবারেই নেই। যা হোক প্রসঙ্গটা আমার এখানে নয়। আমার লেখায় কারো চরিত্রে আঘাত লেগে থাকলে মাফ করবেন। আসলে আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল না রেখে পদক্ষেপ নিলে যা হয় তাই হয়েছে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে। শুরু থেকেই সরকারের পদক্ষেপ গুলো আমরা কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছি? বিদেশ ফেরত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কোয়ারেনটাইন নিয়ে কি যে যুদ্ধ তা সকলেই দেখেছেন! তাদেরকে রাখতে হলে নবাব বাড়ি লাগবে। না হয় “আই হেট মাই মাদারল্যান্ড” বলে উনারা আবার বিদেশে চলে যাবেন! অনেকে আক্ষেপ করে এখন বলতে শুনি ” বিদেশ ঘুইরা আসা নবাবজাদারা আজ দেশটারে কই নিয়া গেছে।” কিন্তু তখন যদি আমরা ওদের পক্ষ না নিয়ে সরকারকে সমর্থন করতাম তাহলে হয়তো আজ দৃশ্যপট এমন হতো না। উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের তুলনা করলে লাভ কি? সরকার বাস্তবতা নিরিখে যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা করে যাচ্ছেন। এখন নিজের কাছে প্রশ্ন এ পরিস্থিতিতে নিজেদের সু-রক্ষায় আমরা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছি? সকল দায় কি সরকারের একার? আজ করোনা যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেনে তারা কারা? সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের লোকজন যে তুলানায় আক্রান্ত হয়েছেন সে তুলনায় আমরা কোথায় আছি? সেবা দিতে গিয়ে আমরা ক’জন আক্রান্ত হয়েছি। সরকারের সমালোচনা করা সহজ, সহযোগিতা করা কঠিন। এই দূর্যোগে সরকারকে সহযোগিতা দিতে যেখানে আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত ছিল (আমি সবার কথা বলছি না) সেখানে আমরা চাউল, ডাল, তেল, রিলিফ চুরিতে মত্ত হয়ে গেলাম। অধিক মুনাফা লোভে বাজার কারসাজিতে লিপ্ত হলাম। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির সরকারীভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া আদৌ সম্ভব নয়। সরকারের সীমাদ্ধতা রয়েছে অনেক। দেশে অপেক্ষাকৃত বিত্তবানদের বেসরকারী খাতে চিকিৎসা সেবা নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের সচেতন না হয়ে উপায় কি। নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বে নেই। সবকিছু দায়িত্ব সরকারের বলে আমরা মনে করি। সহজে পাই তাই গুরুত্ব নেই। বেসকারী খাতে শুধু করোনা টেষ্ট করতে লাগে ৩৫০০/- টাকা, এখন শুনছি তাদের হাসপাতালে ভর্তিও নাকি হতে হবে। লেহালুয়া! বেসরকারীর মামলা তো কারো অজানা নয়। অবস্থাদৃষ্টে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে সরকারের বর্তামান পদক্ষেপে যথেষ্ট যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি। বাঙালি ঘাড় বাঁকা জাতি। ঘাড়ে জোয়াল না দিলে আমরা সোজা হবো না। আমাদের গ্রামবাংলায় একটা প্রবাদ আছে “সংসারের উড়নচন্ডি পোলারে বাগে আনতে বিয়া করাইয়া দাও। তাইলে সংসারের কেছায় সোজা অইয়া যাইবো। মগড়ামি ছাড়বো সংসারও চিনবো।”

জুলফিকার শাহীন

সিনিয়র সাংবাদিক। ০৭/০৫/২০২০

More from গণমাধ্যমMore posts in গণমাধ্যম »
More from জাতীয়More posts in জাতীয় »
More from জীবনধারাMore posts in জীবনধারা »
More from প্রচ্ছদMore posts in প্রচ্ছদ »
More from প্রশাসনMore posts in প্রশাসন »
More from বিচিত্র-সংবাদMore posts in বিচিত্র-সংবাদ »
More from রাজনীতিMore posts in রাজনীতি »
More from সকল সংবাদMore posts in সকল সংবাদ »
More from সারা বাংলাMore posts in সারা বাংলা »
More from সারাদেশMore posts in সারাদেশ »
More from স্বাস্থ্যMore posts in স্বাস্থ্য »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.