Press "Enter" to skip to content

শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি অবহেলা

শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়; বরং এটি একটি জীবনব্রতের নামও।’শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড-আর শিক্ষকে বলা হয় জাতির বিবেক। একজন শিক্ষার্থীর মননের দ্বিতীয় জন্মস্হান হলো শিক্ষা প্রতিষ্টান। যেখানে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা, ব্যক্তিত্বের জাগরণ, মেধার উৎকর্ষ সাধন করে তাদের জীবন আলোকিত করে তোলা হয়। এই আলোকিত এবং মানবিক সমাজ গঠনের মূল চালিকাশক্তি ও দক্ষ কারিগরই হচ্ছেন একজন শিক্ষক।একদিন এই শিক্ষকের শিক্ষার্থীরাই  রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত থেকে নাগরিক সেবাকে নিশ্চিত করে।পৃথিবীতে একমাত্র একজন শিক্ষকই তার ছাত্রের কাছে হেরে গিয়েও গর্বিত হয়।

একটি স্বাধীন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন আকাংখা মানসম্মত শিক্ষাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠে। জাপান,কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা চীন-সবখানেই রাষ্ট্রীয় চরিত্রের বিভিন্নতাকে আমলে না নিয়ে শিক্ষার বিস্তারকে নিষ্ঠা, যুক্তি ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এদেশেই ’১৯৭৫ সালের ১৫আগষ্ট জাতির পিতার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডটি সকল পরিকল্পনাকে তছনছ করে দিয়ে জাতি গঠনের দর্শন, নীতি ও লক্ষ্যকে করেছে  কক্ষচ্যুত। একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নকে পর্যুদস্ত করে পরবর্তী ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব হয়েছে আদর্শচ্যুত ও বিভ্রান্ত। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলো হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।যারমধ্যে  সবচেয়ে দুরবস্থার মুখে পড়েছে শিক্ষা। দীর্ঘদিনের লালিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলো আক্রান্ত হয়েছে।শিক্ষা এবং শিক্ষকের প্রতি সীমাহীন অবহেলা মুক্তচিন্তার জগতকে করেছে বাধাগ্রস্ত।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ এবং ভারকি ফাউন্ডেশনের ‘গ্লোবাল টিচার্স স্ট্যাটাস ইনডেক্স-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে গড়ে মাত্র ৩৬ শতাংশ ছাত্র–ছাত্রী তাদের শিক্ষকদের সম্মান করে। অর্থাৎ ৬৪ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী তাদের শিক্ষকদের সম্মান করে না। এই ভয়াবহ অবস্থা দূরীকরণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক জাগরণের বদলে তৈরি হচ্ছে শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা। সরকার, রাজনীতি, সমাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সংকোচিত করা হচ্ছে। একজন মেধাবী ছাত্র যখন তার মেধাকে প্রতিষ্ঠিত করে উচ্চাস্বনে অধিষ্ঠিত হয় তখন তার শিক্ষক সবচেয়ে গর্বিত হয়।কিন্ত সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের সীমাহীন অবহেলা শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।রাজনৈতিক অস্হিরতায় গনতন্ত্রের অবনমন আমলা তান্ত্রকে শক্তিশালী করে রাষ্ট্রযন্ত্রে যেমন পচন ধরায়–তেমনি শুধুমাত্র মেধাভিত্তিক শিক্ষাও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়।এরজন্য প্রয়োজন মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ।  শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার যুগলবন্দীতে আমাদের দেশের শিক্ষার নৈতিক বিস্তার ও বিকাশ মূল্যবোধকে প্রশারিত করে শিক্ষা এবং শিক্ষকের কার্যক্রম পরিচালিত হউক। শ্রেণিকক্ষে থাকুক শিক্ষকের নির্ভয় কণ্ঠধ্বনি–লাইব্রেরিতে থাকুক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পদচারণা। তাহলেই প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তার্জাতিক সাফল্য অর্জিত হবে।

More from জীবনধারাMore posts in জীবনধারা »
More from সকল সংবাদMore posts in সকল সংবাদ »
More from সারা বাংলাMore posts in সারা বাংলা »
More from সারাদেশMore posts in সারাদেশ »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.