করোনা মোকাবেলায় গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে সরকারী ছুটি ও লকডাউন চলছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। শুরুতেই গণজমায়েতস্থল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, গণপরিবহন, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষাণা করা হয়েছে। গণসচেতনতা তৈরিতে সরকারের পদক্ষেপ গুলো (সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধোয়া, ঘরবন্দি থাকা) জনগণের মেনে চলায় খুব একটা কমতি ছিল না। যার ফলে অতি সহজেই প্রকৃতির চিরাচারিত রূপ ফুটে উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বিপত্তি দেখা দিলো সমন্বয় হীনতায়। রাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রেখে সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করলো সারা দেশে। সেই সাথে আর্থিক ক্ষতির অজুহাত দেখিয়ে সরকারের নিকট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হলো।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ” তেলের মাথায় তেল ঢালা” আমাদের স্বভাব। দেশের অবস্থা এখন তাই। অথচ করোনার কারণে বেকার হয়ে যাওয়া দোকান মালিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কর্মচারী, মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোটি কোটি মানুষ এখন মনবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের খবর কেউ নিচ্ছেন না। সরকার রিলিফ কর্মসূচী চালু করেছে। কিন্তু সেটা কাদের জন্য? করোনার প্রভাবে বেকার হওয়া মানুষের নাকি সাধারণের জন্য? শুরুতেই দাবী উঠেছিল ক্ষতিগ্রস্থদের চিহ্নত করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের জন্য। কিন্তু তা না করে প্রচলিত প্রথায় ঢালাও ভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে কৃষি শ্রমিকদের মাঝে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা। আর লাভবান হচ্ছে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্ত্বভোগী। দেশে ভালো ফলন হওয়ায় এবং ধানের মূল্য স্বাভাবিক থাকায় কৃষি শ্রমিকদের মাঝে তেমন দূর্ভিক্ষ নেই বললেই চলে। তাছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ কৃষি শ্রমিক বর্গা চাষী। তুলনামূলক ভাবে তারা এখন বেশ স্বচ্ছল। ঢালাও ত্রাণ বিতরণে আজ চাল চুরি, প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০/ টাকা বিতরণের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। অনিয়ম ঠেকাতে এখন প্রশাসনের গলদঘর্ম অবস্থা।
অর্থনৈতিক মন্দাভাব কাটাতে সরকার শর্ত সাপেক্ষে লকডাউন শীতিল করে। মালিক পক্ষ বড় বড় শপিংমল বন্ধের ঘোষাণা করলেও পবিত্র ঈদুল ফিতিরকে সামনে রেখে ক্ষুদ্র ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা ধারদেনা করে তাদের দোকানে মালামাল উঠিয়েছেন। কিন্ত শর্ত ভঙ্গের কারণে আবারো সব লকডাউন করা হয়েছে।
এখন চলছে প্রশাসন আর দোকান মালিকের চোর পুলিশ খেলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দোকান মালিক জানান ঈদকে সামনে রেখে কয়েক লক্ষ টাকা ধারদেনা করে মাল উঠিয়েছি। আশা ছিল ঈদ বাজারে বিক্রি করে ধারদেনা শোধ করবো। কর্মচারীদের বেতন বোনাস দেব। কিন্তু এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছি।
ইতোমধ্যে দোকান কর্মচারী, সেলুন শ্রমিক, দর্জিদের মাঝে নামকাওয়াস্থে ত্রাণ বিতরণ হলও তা একেবারে অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত যারা হাতপাততে পারেন না তাদের সহযোগিতার কথা প্রধানমন্ত্রী বার বার ঘোষণা করলেও দৃশ্যত তার কোন প্রতিফলন নেই। এলাকার উন্নয়নের রূপকার দাবীদার জনপ্রতিনিধি, জনদরদী নেতারা বিষয়টি নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে মনে হয় না। লকডাউন চলছে, চলবে। যতদিন না করোনা নিয়ন্ত্রণে আসে। তাই মধ্যবিত্তরা পেটে ক্ষুধা নিয়ে বলতেই পারেন ” খাওন দেওনের মোরদ নাই, কিলানির গোঁসাই।”
জুলফিকার আলী শাহীন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
Be First to Comment