মানুষের জীবনে রোগ থাকে, শোক থাকে, থাকে হাসি-আনন্দ। কারো রোগ-শোকে আপনজন এগিয়ে আসবে, সাহায্যের হাত বাড়াবে, পাশে থেকে সমবেদনা জানাবে, সাহস যোগাবে। কেউ মারা গেলে সৎকারে সামিল হবে। আর কারো হাসি-আনন্দে ভালো লাগবে অনেক ক্ষেত্রে অংশীদার হবে এটাই চিরন্তন। কিন্তু ভাবুন তো, কারো বাবা, মা, ভাই, বোন, সন্তান অথবা কোনো আপন কেউ একজন মারা গেছেন অথচ নিকটজন হয়েও তার কাছে যেতে পারছেন না! শেষ বিদায়ের করণীয়টুকুও করতে পারছেন না। তাদের কেউ একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। অথচ আপনজন তার কাছে গিয়ে একটু সেবা করতে পারছেন না। সে এক ঘরে, একা বন্দি জীবন যাপন করছেন। তখন তাদের মনের অবস্থা কেমন হবে? কী করুণ আর বেদনাদায়ক-ই না।
ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত সাত লাখের বেশি। আমাদের দেশেও ৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। এর বাইরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন আরও কয়েক জন।
সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর লাশ এলাকার কবরস্থানে দাফন করতে দেওয়া হচ্ছে না। সর্দি কাশিতে আক্রান্ত কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না। কেউ কেউ ইচ্ছা করেই হাসপাতালে যাচ্ছেন না। চিকিৎসা না পেয়েই ধুকেধুকে কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন।
মানুষকে বলা হয় সবচেয়ে মানবিক প্রাণি। বাস্তবেও তা-ই। এ জন্যই কারো দু:খে ব্যথিত হই। কারো সুখে আনন্দ পাই। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে প্রিয় মানুষটির কাছে থাকতেই ভালোবাসি। কিন্তু আজ আমরা এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কী এক অমানবিক চিত্র-ই না দেখতে হচ্ছে আমাদের। এজন্য-ই বোধ হয় মানুষের জীবন বৈচিত্রময়।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী? চিকিৎসকরা বলছেন, নিজের জন্য, পরিবারের অন্যদের জন্য, সমাজের জন্য, সর্বোপরি রাষ্ট্রের জন্য এ অবস্থায় ঘরে থাকতে। ইতিমধ্যে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঘোষণা করেছে সাধারণ ছুটি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সকল পর্যায় থেকে, বিভিন্ন সংগঠন, সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ আহবান জানাচ্ছেন অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া ঘওে বাইরে বা জনসমাগমে না যেতে।
অথচ দু:খজনক ভাবে দেখা যাচ্ছে, অনেকই এসবের তোয়াক্কা না করে বাইরে যত্রতত্র ঘোরাফেরা করছেন। আড্ডা দিচ্ছেন। স্টলে বসে চা খাচ্ছেন। বলুন তো এই মূহুর্তে চা খাওয়া, আড্ডা দেওয়া কী খুব জরুরী? কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে আছেন। রাস্তাঘাট ফাঁকা পেয়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। মানা হচ্ছে না নিরাপদ দুরত্ব। কী আত্মঘাতী আচরণ-ই না করছি আমরা।
এ সব বিষয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মোবাইলে ও ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনেকেই জানাচ্ছেন।
একবার ভেবে দেখেছেন, এ দুর্যোগ সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, চীনসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন লাশের মিছিল দেখছি। আর এ পরিস্থিতি আমাদের হলে (মহান সৃষ্টিকর্তা যেন এমন না করেন) আমরা কি তা সামাল দিতে পারব? অব্যশই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।
তাহলে আসুন, নিজে এমন নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার আগে সচেতন হই। সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি। আত্মঘাতী না হই।
আমরা সবাই জানি, এ জন্য কষ্ট হয়ত হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষদের কষ্টটা হচ্ছে বেশি। তবে সৃষ্টিকর্তা চাইলে আর আমরা সকলে সচেতন হলে এ কষ্ট সাময়িক।
গবেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থতিতে প্রকৃতি নাকি নির্মল শ্বাস নিচ্ছে। সারা পৃথিবীতে কার্বণ নি:সরণ কমেছে। কমেছে বায়ু দুষণ। যারা বেঁচে থাকবে সেই মানুষগুলোর জন্য বাসযোগ এ পৃথিবী আরও বেশি উপযোগী হচ্ছে।
জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখুন, প্রকৃতি কি দারুণ সুন্দর সাজে সজ্জিত হচ্ছে। গাছে গাছে সবুজ পাতার সমাহার। ডাকছে পাখ-পাখালি। এরাও বোধ হয় আমাদের বলছে, তোমরা ঘরে থাক। তোমাদের জন্য আমারা পসরা সাজাচ্ছি। আর কয়দিন পরেই তা তোমাদের মধ্যে বিলিয়ে দেব। যখন তোমরা আবার কর্মময় জীবন নিয়ে বাইরে আসবে। প্রিয়জন নিয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে আবার বিমোহিত হবে।
মো. গোলাম মোস্তফা
প্রধান শিক্ষক, মৌদাম সেসিপ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
ও উপজেলা প্রতিনিধি, কালের কণ্ঠ, পূর্বধলা, নেত্রকোনা। মোবাইল: ০১৭১১৫১১২৯৯।
Be First to Comment