নেত্রকোনার পূর্বধলায় ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার, ইউপি সদস্য ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ ৫ জনের নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক গৃহবধূ।
গতকাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে নেত্রকোনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপজেলার নৈগাঁও গ্রামের মোঃ শাহিন মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ হোরে মদিনা (৩২) মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ হাদিউল ইসলাম (৪৫)। অন্যান্য আসামিরা হলেন বিশকাকুনী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য নৈগাঁও গ্রামের মৃত নূরুল আমিন সরকারের ছেলে মোঃ সেলিম সরকার (৫০), একই গ্রামের মৃত পাঞ্জর আলীর ছেলে আঃ রাসিদ (৬০), একই গ্রামের মৃত হাসমত উল্লাহর ছেলে নৈগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল্লাহ ওরফে তৌহিদ মিয়া (৫৮) ও নৈগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ ওরফে জজ মিয়া (৫২)।
শ্লীলতাহানি ও বসতবাড়ি দখল এবং মারধরের অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলাটি বিজ্ঞ নেত্রকোনা আমলি আদালতের বিচারিক আশরাফুন্নাহার আমলে নিয়ে জুডিসিয়াল তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন।
গৃহবধূর শ্লীলতাহানি ও বসতবাড়ি দখলের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী শহিদুল্লাহ।
বাদী তার ফৌজদারি দরখাস্তে অভিযোগ করেন, নৈগাঁও গ্রামে সে দীর্ঘদিন ধরে নিজ দখলিয় ভূমিতে বসবাস করে আসছিল। সত্ব দখলীয় বসতবাড়ি জবর দখল করে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে আঃ রাসিদ গংরা নানান ফন্দি আঁটছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া চারটার দিকে বাদিনীর স্বামী মোঃ শাহীন দিনমজুরের কাজে চলে গেলে মোঃ হাদিউল ইসলাম, ইউপি সদস্য মোঃ সেলিম সরকারকে নিয়ে মোটরসাইকেল যুগে উপস্থিত হয়ে কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে একটি বল ফিতা দিয়ে মাপপামাপি শুরু করে। এক পর্যায়ে বাদিনীর বসতঘরের মাঝখানে একটি বাঁশের খুঁটি স্থাপন করে। এবিষয়ে বাদীনি জিজ্ঞেস করলে হাদিউল ইসলাম বলেন খুঁটির পশ্চিম পাশের জায়গা সরকারি জায়গা। মামলার ১নং আসামি হাদিউল ইসলাম অন্যান্য আসামীদের হুকুম দেয় খুঁটির বরাবর পশ্চিম পাশের জায়গার ঘর ভেঙে ফেলার জন্য। বিবাদীগন বসতঘরের বেড়া ভাঙার সময় বাদীনি ফেরাতে গেলে হাদিউল ইসলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং শরীরের কাপড়-চোপড় টেনে খুলে অর্ধ উলঙ্গ করে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটায়। ঘরের পশ্চিম পাশে টিনের বেড়া ভাঙ্গা শুরু করলে সেখানে ফেরাতে গেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে শরীরের নানা স্থানে কিল, ঘুসি, নীলা-ফুলা জখম করে। ঘরের বেড়া ভেঙে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এসে আটক করে জিজ্ঞেস করলে হাদিউল ইসলাম সরকারি সার্ভেয়ার বলে পরিচয় দেয়। ভাঙ্গার কারণ জিজ্ঞেস করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি এবং হাদিউল উচ্চবাচ্য করে জবাব দেয় এবিষয়ে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় নাই। পরে এই ঘটনার বিষয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ঐদিন রাতে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে ২৩ জনসহ অজ্ঞাত নামা আরো কয়েকজনকে আসামি করে পূ্র্বধলা থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলার বাদিনী হোরে মদিনা এবিষয়ে প্রকৃত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে উপজেলা সার্ভেয়ার হাদিউল ইসলাম এর কাছে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হাদিউল সাংবাদিকে “শয়তানি করেন, বিটলামি করেন? এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে ফোন কেটে দেয় এবং পরবর্তীতে বারবার ফোন করেও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মফিজুল হক বলেন, আপনাদের কাছেই প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি।
Be First to Comment