Press "Enter" to skip to content

স্বাধীনতা আনলেও শামছুল ইসলাম পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি!

মুক্তিযুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাননি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের মহেষপট্টি গ্রামের মৃত. ইসমাহিল হোসেনের ছেলে মো. শামছুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভূক্ত না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছেন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে। জীবন সায়াহ্নে এসে অসুস্থ, অযত্ন-অবহেলা, অভাব-অনটনে উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বসবাস করছেন। বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারনে কথা বলতে কষ্ট হয়। অলস সময়ে ঝাপসা চোখে এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সহযোদ্ধারাও তার এই দুর্দশা, হতাশা ও অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি শামছুল ইসলামের নাম গেজেটভুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহায়তা চেয়েছেন।


শামছুল ইসলাম ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আলী নেওয়াজের সহযোগিতায় ঘোষগাঁও হয়ে প্রথমে শিববাড়ি যান। সেখান থেকে তোড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে ৩০দিন প্রশিক্ষণ নেন। তার প্রশিক্ষক ছিলেন সান্থ সিং বাবাজি। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধা হিসেবে যোগ দেন। তার কোম্পানী কমান্ডার একেএন আবুল হোসেন আকন্দ এবং প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল কদ্দুছ ফকির। শামছুল ইসলামের দলটি জামালপুরের বকশীগঞ্জ এলাকায় হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করে। দেশ স্বাধীন হলে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল কেন্দ্রে অস্ত্র জমা দেন।  


শামছুল ইসলামের মেয়ে মাজেদা আক্তার বিউটি বলেন, আমার বাবা জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তিনি অনেকের কাছে ঘুরেছেন। অনেক অফিসে আবেদন করেছেন। অভাবের সংসারে তারা ৩ বোন। আয়ের কোন পথ না থাকায় বাবা-মা যখন না খেয়ে থাকতেন তখন তিনি বাবাকে তার স্বামীর পরিবারের সাথে রাখছেন। অপর এক বোন মাকে দেখাশোনা করছেন। বাবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্তির জন্য ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করেন যার ডিজি নং- ডিজিআই১৩৪৬৩২। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে উপজেলায় অধিকতর যাচাই বাচাই কমিটিতে সর্ব সম্মতিক্রমে তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ২নং ক্রমিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য প্রেরণ করেন। সে তালিকার কেউ কেউ গেজেটভুক্ত হলেও তার বাবার নাম ওঠেনি! তিনি বার্ধক্যের কারনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার অসুস্থতা ও অসহায়ত্বের বর্ণনা দিতে তিনি একদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার কথা শুনে শামছুল ইসলামের তথ্যাদি যাচাই বাচাই করে বসতঘর নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রির ত্রাণ তহবিল থেকে ২লক্ষ ও মাসিক ৫হাজার টাকা করে সম্মানি দিয়ে যাচ্ছেন। অসুস্থতায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও মুক্তিযোদ্ধার জন্য বরাদ্দ সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির জন্য পরবর্তীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  সালে পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা প্রশাসক বরাবর এবং জেলা প্রশাসক ৫মার্চ ২০২০ তারিখে সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন করেন। তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় ৮ অক্টোবর ২০২৩ মাননীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশপত্র দিয়েছেন। বিউটি আরো বলেন, পিতার গেজেটভুক্তির জন্য ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মহাপরিচালক, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে তিনি আরেকটি আবেদন করেন। ডকেট নং: ৩৯২৫। তিনি বলেন, আমি বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গৌরবের সঙ্গে বাঁচতে চাই।


তুরা ইয়ুথ ক্যাম্পে শামছুল ইসলামের সাথে প্রশিক্ষণ নেওয়া ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কালিখা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী নেওয়াজ খাঁ বলেন, শামছুল ইসলাম ও আমি একসাথে ৩০দিন ট্রেনিং করেছি। ট্রেনিং শেষে আমরা যুদ্ধে অংশ নেই। এ নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে আমি সাক্ষ্যও দিয়েছি।  
মুক্তিযুদ্ধ কালীন প্লাটুন কমান্ডার ও পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পূর্বধলা থানা কমান্ডের কমান্ডার মো. সিরাজুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দেশ স্বাধীন হলে থানা কমান্ডার নির্বাচনে আমি শামছুল ইসলামের বাড়ি গিয়েছি কয়েকবার। সে হোগলা ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ভোটার ছিল ও নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। শামছুল ছিল গরিব ও অসচ্ছল একজন কাটমিস্ত্রি। নদী ভাঙ্গনে তার বাড়ি বিলীন হলে শ্বশুর বাড়ি গোয়াতলায় বসবাস শুরু করে। তখন সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই গেজেটভুক্তিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে শামছুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। গেজেটভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।


মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, আলী আহাম্মদ খান আইয়োব বলেন, তার সাথে আমার কয়েকবার কথা হয়েছে। যুদ্ধ বিষয়ক কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা করেছিলেন সে সময়। তাকে নিয়ে আমার কাজ করা হয়নি। তবে মনে হয়েছে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

More from গণমাধ্যমMore posts in গণমাধ্যম »
More from জীবনধারাMore posts in জীবনধারা »
More from প্রচ্ছদMore posts in প্রচ্ছদ »
More from প্রশাসনMore posts in প্রশাসন »
More from বিশেষ সংবাদMore posts in বিশেষ সংবাদ »
More from রাজনীতিMore posts in রাজনীতি »
More from রাজনীতিMore posts in রাজনীতি »
More from সকল সংবাদMore posts in সকল সংবাদ »
More from সারা বাংলাMore posts in সারা বাংলা »
More from সারাদেশMore posts in সারাদেশ »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.