Press "Enter" to skip to content

মুক্তিযোদ্বার সন্তান ও সাংবাদিক পরিচয়ে চালাতেন অপকর্ম

জুলাই বিপ্লবের সরাসরি বিরোধিতাকারী তথাকথিত সাংবাদিক মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া। সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। 


ওয়াদুদ নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার খারছাইল গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ৪ আগস্ট ছাত্রলীগের মিছিল ফেসবুকে লাইভে দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ক্যাপশনে লিখেন “প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে অস্ত্র দেন। আমরা আবারও ১৯৭১ সালের মত জামায়াত-শিবির রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে চাই। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে আছে থাকবে “। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীতেও খোলস পাল্টিয়ে থেমে নেই তার দাপট।


২১ ডিসেম্বর ইউটিউবার রুহুল আমিনের পরিবারকে হুমকি দেওয়ায় ২৫ ও ২৯ ডিসেম্বর  পূর্বধলা থানায় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ওয়াদুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন রুহুল আমিন। 


অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, এপ্রিল-মে মাসের দিকে রুহুল আমিনের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে ওয়াদুদ। চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে থানা ও ডিবি পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে শেষমেষ রুহুল আমিনের বাড়িতে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওয়াদুদ।


অভিযোগটি গণমাধ্যমের হাতে আসলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বীমা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া। বীমা গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে  বীমার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে গত বছরের ২৩ এপ্রিল  উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন বীমা গ্রাহকেরা। আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট ও নামধারী সাংবাদিক হওয়ায় তৎকালীন অভিযোগের কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। 


বীমা কর্মী হিসেবে উপজেলা থানা রোডে একটি অফিস ভাড়া নিয়ে বীমা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন ওয়াদুদ। সেখানে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে বীমার টাকা আত্মসাৎ করেন ওয়াদুদ। ভুক্তভোগীরা এর প্রতিকার চাইলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান বলে তাদেরকে ভয় ভীতি ও হুমকি দিতেন। পরবর্তীতে থানা রোডের সেই অফিসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। 
এই সকল বিষয় ধামাচাপা দিতে স্বাধীনতা ডট কম নামে একটি ওয়েব পোর্টাল খুলে নিজে নিজেই বনে যান সাংবাদিক। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পূর্বধলা প্রেসক্লাবের নাম উল্টে দিয়ে প্রেসক্লাব পূর্বধলা নামে খুলে বসেন তথাকথিত সাংবাদিক সংগঠন। রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সদস্য বানিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শুরু করেন জাল জালিয়াতি। 


উপজেলায় নতুন অফিসার যোগদান করলে প্রথমেই তথাকথিত সংগঠনে নামে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট দিয়ে স্বাগত জানানো ছিল তার অন্যরকম এক কৌশল। পরবর্তীতে অফিসারদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতেন বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা।
নিজের ন্যাশনাল আইডিতে নাম মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান এস এম ওয়াদুদ। নিজের এনআইডি কার্ডের জন্ম সাল ১৯৮৬ থেকে ১১ বছর কমিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে জন্ম সাল ১৯৯৭ দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে রাবেয়া আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজে ২০২১ সালে ল্যাব এসিস্টেন্ট পদে চাকরি নেন ওয়াদুদ। সেখান থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ নিচ্ছেন বেতন ভাতা।


নিজেকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিমদ্দিন এতিমখানা ও বায়তুল কুরআন নূরানী মাদ্রাসা। এই এতিমখানা ও মাদ্রাসা দেখিয়ে সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন অনুদান গ্রহণ করতেন। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী  মাদ্রাসায় ছাত্র ছাত্রীর সংখ্য সর্বমোট ৭০-৮০ এতিমের সংখ্যা ৪ জন। সকল ছাত্র-ছাত্রীদের দিতে হয় বেতন ভাতা ও ভর্তি ফ্রী। সকলেই অন্যের বাড়িতে লজিং থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীরা কেউই মাদ্রাসায় খাওয়া-দাওয়া করেন না। মাদ্রাসায় কোন বডিং সিস্টেম নেই। তবুও তিনি গত ২৮ অক্টোবর এতিম অসহায় ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য বাবদ ৫ মেট্রিক টন জি.আর চাউল বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। এইরকম ভাবে শুরু থেকেই অনেক সরকারি সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নেন। 
ওয়াদুদ উপজেলার দেওটুকোন বাজারে ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন। উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া বাজারের পাশেই অবৈধ জায়গায় দুই তালা ভবন করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরে কোর্টের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয়। 


অভিযোগকারী ইউটিউবার মো. রুহুল আমিন বলেন, ওয়াদুদ প্রায় সময় চাঁদা দাবি করতো সাধ্য অনুযায়ী তাকে দেওয়া হতো। মোটা অংকের চাঁদা দাবি করলে চাঁদা না দেওয়ায় থানা ও ডিবি পুলিশ এমনকি সেনাবাহিনী বাড়িতে পাঠিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।


প্রেসক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী শাহীন বলেন, পূর্বধলা প্রেসক্লাবের নাম উল্টে দিয়ে প্রেসক্লাব পূর্বধলা নামে সংগঠন করায় জনমনে বিভ্রান্তের সৃষ্টি করছে এবং বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। 


পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ রিয়াদ মাহমুদ জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত চলমান রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ানা কবির বলেন, অভিযোগ এসেছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ওরফে এস এম ওয়াদুদ এর সাথে মোঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

More from গণমাধ্যমMore posts in গণমাধ্যম »
More from বিশেষ সংবাদMore posts in বিশেষ সংবাদ »
More from রাজনীতিMore posts in রাজনীতি »
More from রাজনীতিMore posts in রাজনীতি »
More from সকল সংবাদMore posts in সকল সংবাদ »
More from সারা বাংলাMore posts in সারা বাংলা »
More from সারাদেশMore posts in সারাদেশ »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.