নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার হোছাইনিয়া ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসায় পুরাতন সরকারি বই চুরির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিয়ে চরম বিতর্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুইজনকে হাতেনাতে শনাক্ত করা হলেও চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায় বিষয়টিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানি’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী পরিবার।
গত ১১ ডিসেম্বর দুপুরে মাদরাসা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ৬৫০টি পুরাতন সরকারি বই চুরির চেষ্টা চালায় একটি চক্র। মাদরাসার নৈশপ্রহরী সবুজ মিয়ার তৎপরতায় চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বইগুলো জব্দ করে। ওই সময় মাদরাসার এমএলএসএস মো. আশরাফুল আলম (৪৮) ও মাকছুদ আলম (৫০) পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার দিন মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খান ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পুলিশ জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে। অভিযোগ রয়েছে, উপস্থিত শিক্ষকরা তখন অন্য কারও সম্পৃক্ততার কথা জানাননি। তবে ১৫ ডিসেম্বর অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত দুইজন ছাড়াও আরও দুইজন—এমএলএসএস আ. ছালাম ও অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান আকন্দকে আসামি করা হয়।
স্থানীয় সূত্র ও মামলার সাক্ষীদের দাবি, আ. ছালাম ও আশরাফুজ্জামান আকন্দ ঘটনার সময় মাদরাসায় উপস্থিত ছিলেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরনো শত্রুতার জের ধরে তাঁদের এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মাদরাসার ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান আকন্দ। ওই মামলায় অধ্যক্ষকে কারাবরণ ও সাময়িক বরখাস্তও হতে হয়েছিল। সচেতন মহলের ধারণা, সেই মামলার প্রতিশোধ নিতেই এবার বই চুরির ঘটনায় আশরাফুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান আকন্দ চাবি দিয়ে দুই জন এমএলএসএস-কে সহায়তা করেছেন। বিস্তারিত সাক্ষাতে জানানো হবে।”
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম জানান, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রুজু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।