কালের বিবর্তনে রবি বর্মণের ৫২ বছরের বাশিঁর আওয়াজ হারিয়ে যাচ্ছে

বাঁশি বাজিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়াটা একপ্রকার অসাধ্য কাজ। ক্লান্ত ভর-দুপুর কিংবা নিশি রাতে হঠাৎ বাতাসে ভেসে আসে মায়াবী বাঁশির সুর। কি এক সুরে সবাই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে যায়। মনমুগ্ধকর বাঁশির কাঁপা কাঁপা সুরে  বাজছে ”খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায় ”।  সিনেমা কিংবা রূপকথার গল্পে শোনা যায় বাঁশির সুরে পরী আসে।  এই মধুর সুর যেন সে কথায় মনে করিয়ে দেয়। ৫২ বছর ধরে এভাবেই বাঁশের বাঁশি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

বলছি  নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা রবি বর্মণের (৬৬) কথা। স্ত্রী, এক মেয়ে ও ৫ সন্তান নিয়ে তার পরিবার। তার বয়স যখন ১৪ তখন থেকেই মনে ইচ্ছা জাগে বাঁশি বাজানো শিখবেন।  একই গ্রামের ফজর আলীর কাছে গিয়ে বসে শুনতেন কীভাবে সুর দিতে হয়। দেখতে দেখতে শিখে ফেলেন বাঁশির সুর। তখন থেকেই ধর্মীয় সংকৃর্তন অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ সম্প্রদায় ও মোতুরা বাশি সম্প্রদায় নামক দুই দলে একাধারে ৭-৮ বছর বাঁশি বাজান। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে নিজেই তৈরী করতেন বাঁশি আর বিভিন্ন মেলায় গিয়ে বিক্রি করতেন। এভাবেই সংসারের হাল ধরতেন তিনি। এ বয়সে এসেও সময় পেলে বসেন নিজের তৈরি বাঁশি নিয়ে। আপন মনে সুর তোলেন কংশ নদের পারে কোনো এক গাছের ছাঁয়ায়। তবে এখন আর কেউ টাকা দেয় না। বৃদ্ধ বয়সে মনের টানে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সুর তোলেন।

এলাকার বাসিন্দা শ্যামল বর্মন বলেন, বর্তমানে আধুনিকতার নামে বিদেশী সংস্কৃতির কারণে শেষ হতে বসেছে বাাঁশির ব্যবহার। এখন আর আগের মতো কোনো অনুষ্ঠানে তিনি ডাক পান না। ফলে বৃদ্ধ বয়সে ঘরে বসেই দিনাতিপাত করছেন। ছোটবেলা থেকেই আমরা তার বাঁশির সুর শুনে আসছি । তিনি ভালো বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি বাঁশির কারিগরও বটে।

উনার স্ত্রী জোৎস্না বর্মন বলেন, আমাদের বিয়া হইছে ৩৫ বছর । বিয়ার আগে থাইক্যা উনি বাঁশি বাজাইতো গান-বাজনার অনুষ্ঠানে। এহন বয়স হইছে আগের মতো পারে না।

বংশী বাদক রবি বর্মণ বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি  বাঁশি বিক্রি করেছি । একসময় গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন মেলা বসতো, সেই মেলায় প্রচুর বাঁশি বিক্রি হতো। এখন আর বাঁশির সুর কেউ শুনে না। এখন আয়-রোজগারের বিকল্প কিছু না থাকায় ঘরে বসেই জীবনটা কাটিয়ে দিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *