পূর্বধলা তেনুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষক কর্মচারী জানুয়ারি মাসের বেতন পাচ্ছেন না

এডহক কমিটির সভাপতি বেতন বিলে স্বাক্ষর না করায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার তেনুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন ওই বিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষক কর্মচারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার তেনুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল কদ্দুছের অবসর গ্রহনের পর গত ২০২০ সালের ৪ঠা জুন বিধি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আজহারুল হক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফারাহ শেখ মোজাম্মেল হক। বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সভাপতির সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দন্ধ সৃষ্টি হয়।

তারই জের ধরে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২২খ্রি: তারিখ এডহক কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হককে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক করিমুন্নাহারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে এক বিদ্যালয়ের দুই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দুজনেই জানুয়ারি মাসের বিল প্রস্তুত করে অগ্রণী ব্যাংক লি: পূর্বধলা শাখায় জমা দেন। আগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিলে সহকারি শিক্ষক করিমুন্নাহার বাদে সকল শিক্ষক কর্মচারী স্বাক্ষর দেন। তবে এই বিলে এডহক কমিটির সভাপতি ফারাহ শেখ মোজাম্মেল হক স্বাক্ষর দেননি।

আবার নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করিমুন্নাহার দুটি বিল তৈরী করে ব্যাংকে জমা দেন। এই বিলে সভাপতি স্বাক্ষর করলেও তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বৈধ নয় দাবী করে ৬জন শিক্ষক কর্মচারী স্বাক্ষর দেননি। একজনকে বাদ দিয়ে নতুন আর একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ও স্বাক্ষর জটিলতার কারনে বিল পোষ্টিং দিতে পারছেন না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

অগ্রণী ব্যাংক পূর্বধলা শাখার ব্যবস্থাপক মো: এরশাদুল হক জানান, বিল জমার শেষ তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারীর পুর্বেই জানুয়ারি মাসের বেতনের জন্য তেনুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পৃথক ৩টি বিল জমা পেয়েছেন। তার মধ্যে দুটি বিল জমা দিয়েছেন নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করিমুন্নাহার। তার দুই বিলে ৬ শিক্ষক কর্মচারীর স্বাক্ষর ও সভাপতির স্বাক্ষর থাকলেও বাকী ৬জনের স্বাক্ষর নেই। এই ক্ষেত্রে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের রেজুলেশন চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় নির্ধারিত তারিখ পার হয়ে গেলেও বিল পোস্টিং দিতে পরেননি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আবার অপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হকের বিলে সভাপতির স্বাক্ষর না থাকায় সেটিও পোস্টিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী কি ব্যবস্থা নিবেন তা উপর মহলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক।


এ বিষয়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করিমুন্নাহার বলেন, এডহক কমিটির গত ১৭ জানুয়ারির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজহারুল হককে বাদ দিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। কমিটির ৪ সদস্যের মধ্যে সভার রেজুলেশনে কয়জন স্বাক্ষর করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, দুইজন সদস্য স্বাক্ষর করেছেন।


অপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক জানান, বিধি অনুযায়ী তিনিই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাকে বাদ দিয়ে সভাপতি নিয়ম বহির্ভুতভাবে আরেকজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানুয়ারি মাসের বেতন আটকে গিয়েছে।


এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের একহক কমিটির সভাপতি ফারাহ শেখ মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এডহক কমিটির মেয়াদপুর্তির আগেই বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটির গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা না করায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হককে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের অপর সহকারি শিক্ষক করিমুন্নাহার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শফিকুল বারী বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতির সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দন্ধের কারনে বেতন না পাওয়ার বিষয়টি দু:খজনক অবহিত করে তিনি বলেন, নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে গেলে অবশ্যই কমিটির কোরাম পূর্ণ হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *